আজকে আরবি মাসের!
- ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
- শুক্রবার
মাসের সূচনা
বছরে বারটি মাস রয়েছে, যে নামেই হোক না কেন, এই মাসগুলোর সূচনা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের একেবারে শুরু থেকেই। আল্লাহ তায়ালা যখন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই তার কাছে বারটি মাসের গণনা বিদ্যমান ছিল।
শন গণনার সূচনা
শন গণনার যে বিষয়টি, সেটি বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখার জন্য সেটাকে এক ধরে তারপর দুই তিন করে গুনতে গুনতে সন গণনার বিষয়টি চালু হয়েছে।
এবং এক এক সময় এসে এক একটি পর্যায়ে এসে এ সকল সন গণনাগুলো বিলুপ্ত হয়ে নতুন আরেকটি সন গণনা শুরু হয়েছে।
ইব্রাহিম আঃ এর সন্তানেরা তাকে যে অগ্নিকাণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা সেটাকে এক ধরে তারপর তারা সন গণনা শুরু করেছেন এবং এটা দীর্ঘকাল এভাবে চলেছে এরপর যখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর বংশধররা মক্কায় অবস্থান করলেন সেখানে বসবাস করলেন ইসমাইল আলাইহিস সালাম সহকারে তার বংশধারা সেখানে থাকা শুরু করলেন এবং কাবাঘর নির্মাণ করলেন তখন কাবাঘর নির্মাণের বছরকে এক ধরে আবার নতুন করে সন গণনা শুরু হয় এরপর আরো বিভিন্ন ঘটনা কে কেন্দ্র করে নতুন করে সন গণনা শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
পূর্ববর্তী শনের বিলুপ্তি
এমনিভাবে আরব জাতির মধ্যে মক্কার মানুষদের ভেতরে সর্বপ্রথম প্রতিমা পূজা কে ভিন্ন এবং নতুন আঙ্গিকে যিনি শুরু করেছেন কা’ব ইবনে লুয়াই তার পর্জন্ত এই সন গণনা চলে আসে।
হিজরী সনের সূচক
এভাবে শন গণনার বিভিন্ন ধাপ ছিল আজ আমরা যে হিজরী সন গণনা করে থাকি মে শনের মাসগুলোর তারিখের উপরে নির্ভর করে অনেক এবাদত বন্দেগী করে থাকি এই হিজরী সন কখন কিভাবে শুরু হয়েছিল কে শুরু করেছিল এ বিষয়ে বেশ অনেকগুলো ইতিহাস গ্রন্থে আমরা যে সকল তথ্য পাই তা একসাথ করলে দেখা যায় প্রায় সমস্ত ইতিহাস গ্রন্থেই উল্লেখিত রয়েছে যে এর সূচনা এবং শুরু করেছিলেন খলীফাতুল মুসলিমীন ইসলাম এর দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু।
হিজরি শনের সূচনা
ওমরে ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শাসনামলে একবার আবু মুসা আল আসারি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যিনি ইরাকের বছরা নগরীতে গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তার কাছে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রাষ্ট্রীয় কোন কাজে পত্র প্রেরণ করেছিলেন এবং সেখানে তারিখ হিসেবে শাবান মাস লেখা ছিল পরবর্তীতে আবু মূসা আসারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছে জানতে চেয়েছেন যে শাবান মাস লেখা এই শাবান মাসটি কোন বছরের সাবান মাস এটা কি চলতি বছরের সাবান মাস নাকি তার আগের বছরের সাবান মাস আমি তো বুঝতে পারছি না কারণ পত্র পৌঁছাতে পৌঁছাতে আগে অনেক সময় লেগে যেত। অতঃপর এই ঘটনার পরে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু চিন্তা করলেন নতুন আঙ্গিকে সনের গণনা যদি আমরা শুরু না করি ইসলামের ইতিহাসের শুরুলগ্নেই, তাহলে ভবিষ্যতে এমন আরো বিপত্তি সমস্যা পত্র-পত্রিকায় দেখা দিবে। তখন তিনি সাহাবায়ে কেরাম এর সাথে পরামর্শ করলেন, যে কিভাবে সন গণনা শুরু করা যায় এবং কোথা থেকে শুরু করা যায়। একেক জন সাহাবী এক একটি পরামর্শ পেশ করলেন কোন কোন সাহাবী পরামর্শ দিলেন , যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জন্মের বছরকে এক ধরে শনের গণনা শুরু করতে পারি, আবার কোন কোন সাহাবী মত দিলেন যে রাসুল সাঃ এর মৃত্যুর বছরকে এক ধরে সনের গণনা শুরু করতে পারি, তালহা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু মত দিলেন যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যে বছর নবুওয়াত লাভ করেছেন ওই বছরকে এক ধরে আমরা সন গণনা শুরু করতে পারি এভাবে বিভিন্ন মত আসতে লাগলো, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মত দিলেন যে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হিজরতের বছরকে এক ধরে আমরা সন গণনা শুরু করতে পারি অনেকগুলো মতামত পাওয়ার পরে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সহ কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবী দের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার পরে সকলেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর হিজরতের বছরকে এক ধরে হিজরী সনের গণনা শুরু করা হবে।
কারণ
হিজরী বছরটাকেই এক ধরে হিজরী সন কেন চালু করা হলো, কেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর জন্ম অথবা তার মৃত্যু অথবা তার নবুয়তের বছরকে এক ধরা হলো না।
১. রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর জন্ম এবং কোন সালে তিনি নবুওয়াত লাভ করেছেন এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
২. আর তার মৃত্যুর সনটি যেহেতু হৃদয়বিদারক অতএব ঐ শনকে স্মরণীয় করে রেখে হিজরী সনের সূচনা করলে সন গণার যে ব্যাপারটি এটি স্বাভাবিক থাকবে না বরং হৃদয়বিদারক হয়ে উঠবে মানুষের কাছে।
তাই হিজরতের বছরকে এক ধরে হিজরী শনের গণনা শুরু করা হয়।
0 Comments